নরসিংদী প্রতিনিধি।
নরসিংদী শহরের শাপলা চত্বর জামে মসজিদের দোকান প্রতারণা করে বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দোকান মালিক টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শাপলা চত্বর জামে মসজিদের সভাপতি মোঃ মাইন উদ্দিন ও সদর উপজেলার বাসাইল গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে মোঃ ইসমাইল এর সাথে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে ৩শত টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মসজিদের সামনে অবস্থিত তিন সাটার বিশিষ্ট একটি পাকা দোকান ঘর ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। সম্পূর্ণ টাকা তিনি নিজ হাতে গ্রহণ করে তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন। স্ট্যাম্পে লিখিত শর্ত ছিলো যে, দোকান বিক্রির পর ১০ বছরের মধ্যে কোনো প্রকার সরকারি কাজে বা মসজিদ কমিটির কাজে দোকান ঘর ভাংগা হয় তাহা হইলে মসজিদ কমিটি দোকানের সম্পূর্ণ টাকা মালিক পক্ষকে ফের দিবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদ মার্কেটের ভিতর দোকান বন্ধ থাকলেও বাইরে বেশকিছু দোকান খোলা রয়েছে। এদিকে নরসিংদী পৌরসভা পাইপ ড্রেন নির্মাণের কারণে সাবেক সভাপতি মাইন উদ্দিনের কাছ থেকে ক্রয় করা ইসমাইলের সিনহা কনফেকশনারি নামক দোকানটি সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেন। দোকান হারিয়ে ইসমাইলের স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ভাঙ্গার কারণ জানতে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা) বলেন, পৌরসভার উন্নয়নের কাজ চলছে। তাছাড়া দোকানটি সম্পূর্ণ অবৈধ জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। এটা সরকারি জায়গা। তাই কোন রকম ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করে বলেন, আমরা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ মাইন উদ্দিনের কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়ে দোকানটি কিনে ছিলাম। আমাদের কাছে কাগজ আছে। দোকান কিনার সময় সে বলেছিলো যদি কোন সময় দোকান ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে আমাদের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিবে। এখন পৌরসভা ড্রেন নির্মাণের জন্য আজ আমার দোকান ভেঙে ফেলেছে। আমরা গরীব মানুষ। এ দোকান থেকেই আমাদের সংসার চলে। এখন আমাদের সংসার চলবে কিভাবে? আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, মসজিদটি প্রথমে ১৯৮৮ সালে নরসিংদী-মদনগঞ্জ রেললাইনের পূর্ব পাশে টিনের ছাপড়া দিয়ে নির্মিত হয়। দুই বছর পর মুসুল্লিদের সুবিধার্থে মসজিদটি পশ্চিম পাশে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়। পরে মুসুল্লি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রচেষ্টা ও অনুদানে ২০১৬ সালে ৫তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে মসজিদটি পূর্ণনির্মাণে হাত দেন। ২০১৭ সালে দ্বিতল আংশিক নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই মাজহাব ও কমিটির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে মসজিদে মুসুল্লিদের নামাজ আদায় করা বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদের ভিতর মেইন গেইট তালাবদ্ধ করে মুসুল্লিদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন তৎকালীন কমিটি। ২০১৭ সালে মসজিদ এবং সকল উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেন তারা। মসজিদ বন্ধ হওয়ার দুইবছর পর ইসমাইলের কাছে ৫ লাখ টাকায় মসজিদের দোকান বিক্রি করেন মাইন উদ্দিন। শুধু তাই নয় সে খন্দকার স্টোর সহ বেশ কয়েকটি মসজিদের দোকান বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করেছেন। মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে টাকা গুলো ফিরিয়ে এনে মসজিদের কল্যাণে ব্যয় করা হোক বলে দাবী করেন তারা।
খন্দকার স্টোরের মালিক মোফাজ্জল খন্দকার দোকান বিক্রির সত্যতা স্বীকার করে প্রতিনিধিকে বলেন, মাইন উদ্দিন মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি প্রস্তাব দেন মসজিদের সিঁড়ি কোঠার অংশ বিক্রি করবেন। আমার প্রয়োজনে তার প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে সিঁড়ি কোঠা কিনার জন্য টাকা দেই। টাকা তার হাতে দেই। পরে তিনি আমাকে একটি কাগজ করে দেন।
আইনজীবী বলেন, যেহেতু রেলওয়ের জায়গা সেখানে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করার কোন বৈধতা নেই। আর মসজিদ! মসজিদের জায়গায় কোনো স্হাপনা তৈরি করে বিক্রি করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আর রোটারিয়ানের মাধ্যমে জায়গা বিক্রি করা অবৈধ। কোন স্হাপনা ও সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে সাবরেজিস্টার কর্তৃক দলিল সম্পাদিত করতে হবে। এখন যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এটা টাকার পরিবর্তে ছবি মাত্র।
এবিষয়ে মসজিদ কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লিটন খন্দকার জানান, মসজিদ আল্লাহর ঘর। তারা মসজিদের সম্পদ বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করেছে। মসজিদ বন্ধ থাকার পরও কাউকে কিছু না জানিয়ে এককভাবে সে মসজিদের দোকানগুলো বিক্রি করে টাকাগুলো আত্মসাত করেছেন। টাকা উদ্ধার সহ দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি আরও জানান এলাকাবাসী সহ আলেম ওলামারা বহুবার সমাধানের চেষ্টা করেও মসজিদের গেইটের তালা খুলতে ব্যর্থ হোন। পুরো মসজিদের ২/৩ হাজার মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব। মসজিদ খুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় মুসুল্লিসহ এলাকাবাসীরা সাবেক মেয়র ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা করতে না পেরে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এমপির নিকট মসজিদটি খুলে দেওয়ার দাবী করেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নজরে আসলে তিনি মসজিদটি জোহর নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে খুলে দেন।
এবিষয়ে সাবেক সভাপতি মাইন উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য প্রতিনিধি একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে বর্থ্য হয়।
0 Comments